বাড়িতে এমন কিছু জিনিস করুন যাতে আপনার অর্থ-সম্পদ বৃদ্ধি পাবে হু হু করে : জ্যোতিষশাস্ত্র ও বাস্তুশাস্ত্রের দৃষ্টিভঙ্গি
অনেক সময় আমরা আয় করছি, কিন্তু মাসের শেষে দেখি হাতে কিছুই থাকছে না। আয় বাড়ালেও সেই অর্থ ঠিকমতো টিকছে না। এর পিছনে থাকতে পারে কয়েকটি ভুল অভ্যাস, বাস্তুশাস্ত্র বা জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী কিছু নেতিবাচক প্রভাব। তবে, কিছু সহজ উপায়ে আপনি আপনার অর্থের প্রবাহ ও সম্পদে সমৃদ্ধি আনতে পারেন। জেনে নিন কীভাবে বাড়ির কিছু পরিবর্তন ও পদ্ধতির মাধ্যমে অর্থ ও ধন রত্ন বৃদ্ধি করা সম্ভব।
১. বাস্তুশাস্ত্র অনুযায়ী অর্থের প্রভাব
বাস্তুশাস্ত্র অনুসারে, আপনার বাড়ির স্থাপত্য ও সাজসজ্জার সঙ্গে আর্থিক স্থিতিশীলতার সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। সঠিকভাবে বাড়ি সাজানো ও কিছু বিশেষ প্রতিকার অবলম্বন করলে আর্থিক উন্নতি হতে পারে।
অর্থের দিকে বাড়ির মুখ: দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে মুখ করে বাড়ি থাকলে আর্থিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই ক্ষেত্রে উত্তর, পূর্ব বা উত্তর-পূর্ব দিকে মুখ করে বাড়ি থাকা ভালো। এই দিকে বাড়ির মুখ করলে ইতিবাচক শক্তি প্রবাহিত হয়, যা আর্থিক সমৃদ্ধিতে সহায়ক।
ধন-রত্ন রাখার স্থান: বাড়ির উত্তর দিক ধন-সম্পদ বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে উপযোগী। উত্তর দিককে শ্রী ও সমৃদ্ধির দিকে হিসাবে ধরা হয়, যেখানে ধনসম্পদ সংরক্ষণ করলে তা বাড়ে। আপনি আপনার টাকার বাক্স, আলমারি বা অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র উত্তর দিকে রাখুন।
২. লক্ষ্মী পুজো ও প্রতিদিনের উপাসনা
জ্যোতিষশাস্ত্রে মা লক্ষ্মীকে ধন-সম্পদের দেবী হিসাবে ধরা হয়। প্রতিদিন বা নিয়মিত মা লক্ষ্মীর পুজো করলে বাড়িতে ধন ও সুখ-সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পায়। ঘরে একটি পরিষ্কার ও সুন্দর মূর্তি বা ছবি রাখুন এবং প্রতিদিন পূজা করুন। সন্ধ্যায় একটি ঘি-এর প্রদীপ জ্বালান, যা আপনার বাড়িতে ইতিবাচক শক্তি প্রবাহিত করবে।
৩. তুলসী গাছ রোপণ করুন
তুলসী গাছ শুধু আধ্যাত্মিক দিক থেকেই নয়, আর্থিক দিকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাস্তুশাস্ত্র অনুযায়ী বাড়ির উত্তর-পূর্ব কোণে তুলসী গাছ লাগালে তা পরিবারের মধ্যে শান্তি ও ধন বৃদ্ধি করে। প্রতিদিন সকালে তুলসী গাছে জল দিন এবং সন্ধ্যায় প্রদীপ জ্বালান।
৪. মেন দরজার গুরুত্ব
বাড়ির মেন দরজা হলো বাড়িতে ইতিবাচক শক্তি ও অর্থ প্রবাহের মূল উৎস। দরজা সব সময় পরিষ্কার ও আলোকিত রাখতে হবে। এটি দেখায় যে আপনার বাড়িতে সমৃদ্ধি প্রবেশ করছে। দরজায় লক্ষ্মীর পায়ের ছাপ বা তোরণ লাগানো যেতে পারে। এটি সারা বছর ধন-সম্পদ ধরে রাখার প্রতীক হিসেবে কাজ করে।
৫. ভাঙা জিনিস ফেলে দিন
বাস্তুশাস্ত্র অনুযায়ী, বাড়িতে কোনো ভাঙা জিনিস যেমন আয়না, প্লেট, গ্লাস বা ভাঙা আসবাব রাখলে তা নেতিবাচক শক্তির সৃষ্টি করে এবং অর্থের হানি হয়। তাই বাড়ির সমস্ত ভাঙা বা অপ্রয়োজনীয় জিনিস ফেলে দিন বা বদলান।
৬. ফেং শুই রেমেডি
ফেং শুই হলো চীনা বাস্তুশাস্ত্র, যা বাড়িতে ধন-সম্পদ এবং ইতিবাচকতা আনার জন্য বিভিন্ন প্রতিকার দিয়ে থাকে। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ফেং শুই আইটেম হলো:
লাফিং বুদ্ধ: লাফিং বুদ্ধকে ধনসম্পদ ও সুখের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়। বাড়ির উত্তর-পূর্ব দিকে এটি রাখলে আর্থিক সমৃদ্ধি ঘটে।
জলের ফোয়ারা বা একোয়ারিয়াম: বাড়ির উত্তর দিক বা পূর্ব দিকের কোণে ছোট একটি জলের ফোয়ারা বা একোয়ারিয়াম রাখলে ধন বৃদ্ধি হয়। জলের প্রবাহকে সচ্ছল অর্থ প্রবাহের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়।
৭. বাড়িতে সদা পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন
বাড়ি সব সময় পরিচ্ছন্ন রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাড়ির যেকোনো কোণ নোংরা থাকলে সেখানে নেতিবাচক শক্তি বাস করে। এই শক্তি আর্থিক অগ্রগতিকে বাধা দেয়। তাই বাড়ির প্রতিটি কোণ পরিষ্কার রাখুন এবং বিশেষ করে মেন দরজার সামনে নোংরা যেন না থাকে, তা নিশ্চিত করুন।
৮. ব্যক্তিগত অভ্যাস পরিবর্তন
শুধু বাড়ির সাজসজ্জাই নয়, ব্যক্তিগত অভ্যাসও ধন-সম্পদ বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিছু ভালো অভ্যাস যেমন:
প্রতিদিন সকালে সূর্যোদয়ের আগে উঠুন এবং পূজা করুন।
টাকা এবং মূল্যবান জিনিস সযত্নে রাখুন।
অর্থনৈতিক পরিকল্পনা করে খরচ এবং সঞ্চয় করুন।
৯. নীল বা সবুজ রঙের ব্যবহার
নীল ও সবুজ রঙকে আর্থিক সচ্ছলতা ও সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে ধরা হয়। বাড়িতে এই রঙের আসবাবপত্র বা পর্দা ব্যবহার করলে তা ধনসম্পদের বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়।
১০. ধন বৃদ্ধির জন্য মন্ত্র জপ ও পাথর
জ্যোতিষশাস্ত্রে নির্দিষ্ট মন্ত্র ও পাথর ব্যবহার করলে ধন বৃদ্ধি হতে পারে। ধন লক্ষ্মী মন্ত্র বা ‘শ্রী সুক্তম’ মন্ত্র জপ করলে আর্থিক উন্নতি ঘটতে পারে। এছাড়াও, অর্থ ও সমৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত রত্ন যেমন পোখরাজ, নীলা ইত্যাদি জ্যোতিষী পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারেন।
অর্থ ও ধন-সম্পদ বাড়ানোর জন্য কিছু বিশেষ বাস্তুশাস্ত্র ও জ্যোতিষশাস্ত্রের প্রতিকার গ্রহণ করলে তা আর্থিক সমস্যার সমাধান করতে পারে। নিয়মিত পূজা, বাড়ির পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, এবং কিছু সহজ অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে আপনার আর্থিক পরিস্থিতি ভালো হতে পারে।