Bengal Dunia

শরীরে পুষ্টির অভাব না রাখতে চাইলে খাবারের পাতে রাখুন এই শাক

কলমি শাকের গুনাবলী ও স্বাস্থ্য উপকারিতা

কলমি শাক (ইংরেজিতে Water Spinach বা Water Morning Glory) গ্রামীণ বাংলার এক অত্যন্ত পরিচিত সবজি। এর বৈজ্ঞানিক নাম Ipomoea aquatica, এবং এটি সাধারণত জলাশয় বা আর্দ্র মাটিতে জন্মে। বিভিন্ন পুষ্টিগুণে ভরপুর কলমি শাক আমাদের শরীরের নানা উপকারে আসে। নিচে এর পুষ্টিগুণ, উপকারিতা এবং এর ব্যবহারের পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

শরীরে পুষ্টির অভাব না রাখতে চাইলে খাবারের পাতে রাখুন এই শাক

১. পুষ্টিগুণ

কলমি শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ এবং ফাইবার রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:

ভিটামিন এ: চোখের স্বাস্থ্য এবং ত্বকের উন্নতিতে সহায়ক।

ভিটামিন সি: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।

আয়রন: রক্তাল্পতা প্রতিরোধে কার্যকর।

ক্যালসিয়াম: হাড় ও দাঁতের গঠন মজবুত করে।

পটাশিয়াম: রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

ডায়েটারি ফাইবার: হজমে সহায়ক এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়ক।

২. স্বাস্থ্য উপকারিতা

i. রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে সহায়ক

কলমি শাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে, যা হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায়। এটি রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে যাঁদের শরীরে আয়রনের অভাব রয়েছে, তাঁদের জন্য কলমি শাক অত্যন্ত উপকারী।

ii. চোখের জন্য উপকারী

এতে থাকা ভিটামিন এ এবং বিটা-ক্যারোটিন চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক। নিয়মিত কলমি শাক খেলে রাতকানা রোগসহ বিভিন্ন চোখের সমস্যার সম্ভাবনা কমে যায়।

iii. হজমশক্তি বৃদ্ধি করে

কলমি শাকে উচ্চমাত্রায় ফাইবার থাকে, যা হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক।

iv. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি

কলমি শাকে থাকা ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটি ত্বকের স্বাস্থ্যও ভালো রাখে এবং ঠান্ডা, সর্দি, কাশি ইত্যাদি সমস্যা প্রতিরোধে কার্যকর।

v. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক

এই শাকে থাকা উপাদানগুলি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক। কলমি শাক খেলে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ে এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে।

vi. লিভারের জন্য উপকারী

কলমি শাক লিভারের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং লিভারের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।

vii. চর্মরোগ প্রতিরোধ

এই শাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান থাকে যা ত্বকের ক্যান্সারসহ বিভিন্ন চর্মরোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এছাড়া এটি ত্বক উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে।

৩. ব্যবহারের পদ্ধতি

কলমি শাক রান্না করে বা সালাদের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়। এটি সবজি হিসেবে সেদ্ধ করে বা ভাজি করে খাওয়া হয়। এ ছাড়া কলমি শাকের রসও স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য খাওয়া হয়, যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী।

৪. পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

যদিও কলমি শাক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী, তবে কিছু মানুষের জন্য এটি অতিরিক্ত গ্রহণে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে যাঁদের কিডনির সমস্যা রয়েছে, তাঁদের জন্য অতিরিক্ত আয়রন ক্ষতিকর হতে পারে। তাই কিডনির সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী শাকের পরিমাণ নির্ধারণ করা উচিত।

কলমি শাক আমাদের গ্রামবাংলার এক অনন্য সবজি, যা স্বাদ এবং পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। এটি আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সহায়ক। প্রতিদিনের খাবারে এই শাক অন্তর্ভুক্ত করলে আমরা একটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে পারি।

 

Exit mobile version